সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১১

হঠাৎ নিজের কেন যেন মনে হয়ে উঠে যে জড়ের ও প্রাণ আছে ....


লেখালেখির অভ্যাস টা বড়ই খারাপ না লিখলে মাঝে মাঝে নেশাখোর দের মত অবস্থা হয় , কিছু না কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করে । তাই ছোটো একটা কিছু লেখার চেষ্টা । 


কুমিল্লা শহরে স্মৃতি ময় কয়েকটা বছর কাটিয়ে আসা হয় আমার সেখানে তাই এবার ও যাবার সময় বার বার চিন্তা করছিলাম কার সাথে আগে দেখা হবে তাই একটু আবেগের মাত্রাটা আরেকটু বেশিই ছিল ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য এক বন্ধু কে বললাম তুই কান্দিরপাড় দাড়া আমি আইতাসি । এদিকে সেই ক্লাস ফাইভ এরপরে এই শহর টাতে আমার বড় হওয়া তাই আবেগের মাত্রা টা ছিল আরেকটু বেশি , স্কুল এ ভিতর সন্ধ্যার পর ঢুকে গেলাম যদিও গেটে দাড়োয়ান ছিল , আমি সাবেক ছাত্র বলে ভিতরে ঢুকতে পারলাম । ইচ্ছে করছিল স্কুল এর প্রতিটা থাম ছুয়ে দেখি ।কারন দুরন্ত সেই দিন গুলোর দস্যি পনার অনেক স্মৃতি ই জড়িয়ে আছে স্কুল এর প্রতিটা থাম গুলোয় ,যেন নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম পিটি করার সময় ক্লাসের বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে থাকা আর পরে স্যার এর হাতে ঠিক ই ধরা পড়া । অনেকে বলবে যে জীবনে স্যার এর হাতে মার খায় নি বা খাবার ছাত্র ছিল না সে। কিন্তু আমার মনে হয় যে স্যারদের মার খাবার মাঝেও একটা নিয়ামত আছে ,কেমন যেন একটা আদরের মায়া । যে স্যার এর কাছে মার খায় নি তার জীবনে যেন কি একটা অপূর্ণ রয়ে গেল । একা একা স্কুল বিল্ডিং এর সাথে কথা বললাম রাগ অভিমান করলাম অন্ধকার এ দাঁড়িয়ে । জিজ্ঞেস করলাম আমাকে ভুলে গেছে কিনা গাছের পাতা গুলো শীতের প্রারম্ভে কিছু শুষ্ক পাতা ঝরিয়ে বলল না তোমাদের কি ভুলতে পারি ?? :((:((

স্যার এর রুমের সামনে দাড়ালাম , সেই আগের মতই আছে, ঘন্টা বাজাবার জায়গাটা পর্যন্ত পরিবর্তন হয় নি । সামনে আসার রাস্তাটায় দাড়াতেই মনে পড়লো কামরুজ্জামান স্যার এর কথা । স্যার সেকেন্ড টার্মে ম্যাথ এ মাইনাস পাওয়াতে বলেছিলেন যে এরকম ই করবা এস এস সি তে ,টেস্টে এ প্লাস পেয়ে স্যার কে গিয়ে টিচার্স রুমে ভিতর গিয়ে সালাম করে বলে এসেছিলাম যে স্যার আপনার জন্য ম্যাথ এ প্লাস টা পেলাম । আপনি জেদ টা না ধরিয়ে দিয়ে মনে হয় পেতাম না । .....

এখন স্কুল এর সব কিছুই ঠিক আছে শুধু চারপাশ টা একটু বেশি ই কোলাহল ,দিনে রাতে সব সময় আশে পাশে রাস্তায় অপজিটে বিল্ডিং গুলোর কাজ চলছে গোলচত্তরের পাশের বাগান টায় গাছ গুলোয় মনে হয় ধুলি একটু বেশি ই জমেছে ।

সবছেয়ে বড় অভিমান করেছে মনে হয় ধর্মসাগর পাড় টা ।এবার একবার ও দেখতে যায় নি তাকে । কে জানে আবার কোন ঈদে কুমিল্লা যাওয়া পড়বে। একসময় সবার ই নাড়ির টান এখানেই ছিল মাস শেষে সপ্তাহ শেষে সবাই কুমিল্লাতেই আসতো এখন নাড়ির টান হয়তো আর কাজ করে না , নিজের বাসায় মায়াও আর টানে ছেলে মেয়ে ভালো স্কুল কলেজে পড়ানোর প্রতিযোগিতায় সবাই ঢাকায় । নানুর ৪ তালা বাসাটায় গিয়ে একরকম কান্নাই পেলো যেন নীরবে অশ্রুবিসর্জন করছে । কল্পনায় দেখতে পাই এই বাসায় আসার জন্য একসময় কতই না বাহানা করেছি ,আম্মু পড়া শেষ এখন নানু বাসায় চল , আম্মু পেট ব্যাথা নানু বাসায় যাই । 
আম্মু নানু কে দেখিনা অনেকদিন চল না একটু যাই । আর এখন যেন ভুতের পুরী । গেলে মনে হয় এখন দেয়াল এর প্রতিটি ইট এর হাহাকার শুনতে পাই । 

হঠাৎ নিজের মনে হয়ে উঠে জড়ের ও প্রাণ আছে ,নাহলে তাদের কষ্ট গুলো কেন আমি অনুভব করতে পারি আমি । কেনো তাদের আমি বিড়বিড় করে নিজের অজান্তেই স্বান্তনা দেই । আর কেনই বা আমার কান্না আসে .......... 

হয়তো সত্যি । স্মৃতি তুমিই সত্যিই বড় রহস্য ময় ।